বারিমন্ডলের ধারণা (Concept of Hydrosphere)

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ভূগোল ও পরিবেশ - বারিমণ্ডল | | NCTB BOOK

‘Hydrosphere'-এর বাংলা প্রতিশব্দ বারিমণ্ডল। ‘Hydro' শব্দের অর্থ পানি এবং 'Sphere' শব্দের অর্থ মণ্ডল। আমরা জানি পৃথিবীর সর্বত্র রয়েছে পানি। এ বিশাল জলরাশি পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থায় থাকে যেমন— কঠিন (বরফ), গ্যাসীয় (জলীয়বাষ্প) এবং তরল। বায়ুমণ্ডলে পানি রয়েছে জলীয়বাষ্প হিসেবে, ভূপৃষ্ঠে রয়েছে তরল ও কঠিন অবস্থায় এবং ভূপৃষ্ঠের তলদেশে রয়েছে ভূগর্ভস্থ তরল পানি। সুতরাং বারিমণ্ডল বলতে বোঝায় পৃথিবীর সকল জলরাশির অবস্থানভিত্তিক বিস্তরণ (সারণি ১)। পৃথিবীর সকল জলরাশির শতকরা ৯৭ ভাগ পানি রয়েছে সমুদ্রে (মহাসাগর, সাগর ও উপসাগর)। মাত্র ৩ ভাগ পানি রয়েছে নদী, হিমবাহ, ভূগর্ভস্থ, হ্রদ, মৃত্তিকা, বায়ুমণ্ডল ও জীবমণ্ডলে। পৃথিবীর সমস্ত পানিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় যেমন— লবণাক্ত ও মিঠা পানি। পৃথিবীর সকল মহাসাগর, সাগর ও উপসাগরের জলরাশি লবণাক্ত এবং নদী, হ্রদ ও ভূগর্ভস্থ পানি মিঠা পানির উৎস।
সারণি ১ : জলরাশির অবস্থানভিত্তিক বিস্তরণ ও শতকরা হার

জলবিভাগের নাম

 পরিমাণ

(ঘনকিলোমিটার × ১,০০,০০০)

শতকরা হার
         (%)
সমুদ্র ১৩৭০ ৯৭.২৫
হিমবাহ ২৯ ২.০৫
ভূগর্ভস্থ পানি ৯.৫ ০.৬৮
হ্রদ ০.১২৫ ০.০১
মাটির আর্দ্রতা ০.০৬৫ ০.০০৫
বায়ুমণ্ডল ০.০১৩ ০.০০১
নদী ০.০০১৭ ০.০০০১
জীবমণ্ডল ০.০০০৬ .০০০০০৪

মহাসাগর, সাগর ও উপসাগর
বারিমণ্ডলের উন্মুক্ত বিস্তীর্ণ বিশাল লবণাক্ত জলরাশিকে মহাসাগর (Ocean) বলে। পৃথিবীতে পাঁচটি মহাসাগর রয়েছে, এগুলো হলো প্রশান্ত মহাসাগর, আটলান্টিক মহাসাগর, ভারত মহাসাগর, উত্তর মহাসাগর এবং দক্ষিণ মহাসাগর (চিত্র ৬.১)। এর মধ্যে প্রশান্ত মহাসাগর বৃহত্তম ও গভীরতম (সারণি ২)। আটলান্টিক মহাসাগর ভগ্ন উপকূলবিশিষ্ট এবং এটি অনেক আবদ্ধ সাগরের (Enclosed sea) সৃষ্টি করেছে। ভারত মহাসাগর এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশ দ্বারা পরিবেষ্টিত। ৬০° দক্ষিণ অক্ষাংশ থেকে এন্টার্কটিকার হিমভাগ পর্যন্ত দক্ষিণ মহাসাগরের অবস্থান। দক্ষিণ মহাসাগরের দক্ষিণে এন্টার্কটিকা মহাদেশ বছরের সকল সময় বরফে আচ্ছন্ন থাকে। উত্তর গোলার্ধের উত্তর প্রান্তে উত্তর মহাসাগর অবস্থিত এবং এর চারদিক স্থলবেষ্টিত।

সারণি ৩ : মহাসাগরের আয়তন ও গড় গভীরতা

মহাসাগর  আয়তন (বর্গকিলোমিটার) গড় গভীরতা   অবস্থান
প্রশান্ত মহাসাগর ১৬ কোটি ৬০ লক্ষ ৪,২৭০  আমেরিকা ও এশিয়ার মধ্যবর্তী
 আটলান্টিক মহাসাগর ৮ কোটি ২৪ লক্ষ ৩,৯৩২  আমেরিকা,ইউরোপ ও আফ্রিকা
ভারত মহাসাগর ৭ কোটি ৩৬ লক্ষ ৩,৯৬২  আফ্রিকা, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া
উত্তর মহাসাগর ১ কোটি ৫০ লক্ষ ৮২৪ পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ
দক্ষিণ মহাসাগর ১ কোটি ৪৭ লক্ষ ১৪৯ এন্টার্কটিকা ও ৬০° দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যবর্তী

মহাসাগর অপেক্ষা স্বল্প আয়তনবিশিষ্ট জলরাশিকে সাগর (Sea) বলে। যথা- ভূমধ্যসাগর, লোহিত সাগর, ক্যরিবিয়ান সাগর, জাপান সাগর ইত্যাদি। তিনদিকে স্থলভাগ দ্বারা পরিবেষ্টিত এবং একদিকে জল তাকে উপসাগর (Bay) বলে। যথা— বঙ্গোপসাগর, পারস্য উপসাগর ও মেক্সিকো উপসাগর ইত্যাদি। চারদিকে স্থলভাগ দ্বারা বেষ্টিত জলভাগকে হ্রদ (Lake) বলে। যথা— রাশিয়ার বৈকাল হ্রদ, আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সীমান্তে অবস্থিত সুপিরিয়র হ্রদ ও আফ্রিকার ভিক্টোরিয়া হ্রদ ইত্যাদি।

কাজ : পৃথিবীর মানচিত্রে মহাসাগরের অবস্থান মানচিত্র নির্দেশক কাঠি দিয়ে ক্লাসের অন্যান্য সতীর্থদের দেখাও।

 

 

 

Promotion